প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চতা বৃদ্ধি করুন
সত্যি বলতে উচ্চতা বৃদ্ধি মূলত বংশগত, আপনি কতটুকু লম্বা হবেন তার ৮০% নির্ভর করে আপনার বংশের ওপর। আর বাকি ২০% অন্যান্য কিছু কৌশল বা পরিবেশের উপর নির্ভর করে। উচ্চতা বৃদ্ধির মূল উপাদান হচ্ছে গ্রোথ হরমোন। গ্রোথ হরমোন এমন একটি পদার্থ যা শরীরে প্রাকৃতিক ভাবেই সৃষ্টি হয়।
আজকের ফিচারে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে আপনি আপনার উচ্চতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। আপনাকে অবশ্য বেশ ধৈর্য ধরে অনেক দিন মেনে চলতে হবে এসব নিয়ম। তবেই আপনি সন্তোষজনক একটি ফল পাবেন।
ঘুম: প্রাকৃতিক উপায়ে লম্বা হওয়ার সবচাইতে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে ঘুম। ঘুম আমাদের মানসিক ও শারীরিক শান্তির পাশাপাশি ঘুমের সময় দেহ গঠনের টিস্যুগুলো কাজ করে। পরিমিত পরিমাণে ঘুম ও বিশ্রাম নেয়ার মাধ্যমে আমাদের দেহে শরীর গঠনের হরমোন প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপন্ন হতে থাকে। এরফলে আমাদের উচ্চতা ও শারীরিক গঠন বৃদ্ধি পায়। তাই দৈনিক ৮ – ১১ ঘণ্টা ঘুম ও বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করবেন।
সাঁতার: পানি আমাদের শরীরের জন্য বেশ অপরিহার্য একটি উপাদান। গবেষকেরা জানান, আমাদের শরীর যথোপযুক্ত ভাবে কাজ করবে তখনই যখন আপনি পরিমিত পরিমাণে পানি পান করবেন। আভ্যন্তরীণ ভাবে তো বটেই, বাহ্যিক ভাবেও শরীরের জন্য পানি খুব প্রয়োজনীয়। সাঁতার কাটলে আপনার শরীর ফ্লেক্সিবল তো হবেই, সেইসঙ্গে পেশীগুলো প্রসারিত হবে। এভাবেই ধীরে ধীরে আপনার উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। তাই সাঁতার প্রাকৃতিকভাবে লম্বা হওয়ার অন্যতম আরেকটি উপায়।
ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম বা খেলাধূলা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা কিনা গ্রোথ হরমোন বাড়ায়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের বিভিন্ন জোড়াগুলোতে ভাল প্রভাব পড়ে। ফলে উচ্চতা দ্রুত বাড়ে। সপ্তাহে ৩ দিন নিয়মিত ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তবে শুরুতেই কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম বা হাল্কা দৌড়ে শরীরকে ব্যায়াম করার উপযোগী করে নিতে ভুলবেন না।
উচ্চতা বাড়ানোর জন্য ঝুলন্ত ব্যায়াম বেশ উপকারী। শরীরের উর্ধাঙ্গের পেশী প্রসারিত করতে এটি বেশ কার্যকরী। অনেকভাবে আপনি এই ব্যায়ামটি করতে পারেন। একটি পোলে দু’পা জড়িয়ে হাত নিচের দিকে দিয়ে এই এক্সারসাইজটি করতে পারেন। আপনি এ ব্যায়াম প্রতিদিন করলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট দূর হয়ে যাবে। আপনার শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট দূর হয়ে গেলে উচ্চাতাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে।
প্রশ্বাস নিন গভীরভাবে। যেহেতু সব সময় গভীরভাবে প্রশ্বাস নেয়া সম্ভব নয় তাই দিনের যেকোনো একটি সময় নির্বাচন করে গভীরভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার ব্যায়াম করুন। চাইলে মেডিটেশন করতে পারেন কারণ মেডিটেশনও একই ফল দেয়।
এছাড়াও, দড়ি লাফ যেমন দারুণ মজার একটি খেলা তেমনি এটি কিন্তু উচ্চতা বাড়াতেও বেশ সাহায্যকারী। লাফ দিতে হয় দড়ি লাফ খেলার জন্য। এতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরো শরীরের ব্যায়াম হয়। শরীরের প্রতিটি পেশী সক্রিয় হয়ে যায়। যা আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
খাবার: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস উচ্চতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। নিম্নে তারই একটি তালিকা দেয়া হল।
- দুধ – দুধে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম প্রাকৃতিকভাবে উচ্চতা বাড়ানোর সহায়ক উপাদানগুলোর একটি।
- ডিম – ডিমে রয়েছে ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম এবং রিবোফ্ল্যাবিন। যা হাড়ের উন্নয়ন ও শক্তিশালী করণে কাজ করে।
- ফল – মাল্টা, পেপে, আম, ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন, পটাশিয়াম, আঁশ এবং ফোলেট। যা স্বাভাবিকভাবেই উচ্চতা বাড়ায়।
- বাদাম – বাদামে রয়েছে খনিজ ভিটামিন যা দেহের টিস্যু মেরামত এবং নতুন হাড় ও মাংসপেশি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- গাজর – গাজর হাড়ে ক্যালসিয়াম সংরক্ষণ এবং হাড়ের বৃদ্ধিতে উৎসাহ যোগায়। প্রতিদিন অন্তত ৩টি করে গাজর খেলে দেহের উচ্চতা বাড়ে।
- সয়াবিন – সয়াবিন হাড় এবং টিস্যুর ঘনত্ব বাড়ায়। প্রতিদিন অন্তত ৫০ গ্রাম সয়াবিন গ্রহণ করলে, উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
- শালগম – শালগমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পুষ্টি এবং খাদ্য আঁশ। যা আমাদের দেহের বৃদ্ধির জন্য দায়ী হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে।
- মটরশুটি – নানা ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টিতে সমৃদ্ধ যা উচ্চতা বাড়ায়। এছাড়া মটরদানা জাতীয় খাদ্যে কয়েকটি উচ্চতা বৃদ্ধির হরমোনও আছে।
- ব্রোকলি – ব্রোকলিতে রয়েছে উচ্চহারে ভিটামিন সি, আঁশ এবং আয়রন। যা দেহের কার্যক্রম ঠিক রাখতে এবং দৈহিক বৃদ্ধির জন্য দায়ী হরমোনের উদ্দীপনা বাড়াতে সহায়ক।
- কালো তিল+কাজুবাদাম+অশ্বগন্ধা+দুধ – অশ্বগন্ধা এইচজিএইচ হরমোন নিঃসরণের হার ঠিক রাখে। আর এ কারণেই এটি উচ্চতা বৃদ্ধিতে এতটা কার্যকর। এটি হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ঘনত্ব বাড়াতেও কার্যকর। কালো তিলে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বি ও আয়রন। এটি ক্যালসিয়ামেরও ভালো উৎস। হাড়ের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক এসব উপাদান। কাজুবাদামে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়াম যেগুলো হাড়ের বৃদ্ধিতে জরুরি খনিজ উপাদান। আর এই সবগুলো উপাদান দুধের সঙ্গে মিলে উচ্চতা বাড়ায়। প্রতিদিন রাতে দুধের সঙ্গে এক চামচ অশ্বগন্ধা, কাজুবাদাম এবং কালো তিলের পাউডার মিশিয়ে পান করলে উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।
নিয়াসিন: নিয়াসিন হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক ভিটামিন। সাধারণ মানুষের বৃদ্ধি থেকে ৫০০ গ্রাম নিয়াসিন সেবন করা মানুষের লম্বা হওয়ার প্রবণতা বেশি হয়। মানবদেহের বৃদ্ধির ৮০% বংশগত হলেও বাকি ২০% প্রভাব থাকে আপনার পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাসে ও আপনার দৈনন্দিন কার্যকলাপের উপর। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়াসিন সেবনের মাধ্যমেও উচ্চতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বদভ্যাস ত্যাগ: শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এমন বদভ্যাস দ্রুত ত্যাগ করুন। মাত্রাতিরিক্ত চা বা কফি কোনটাই খাবেন না। ধুমপান যেমনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তেমনি দেহের হরমোন গঠনও কমিয়ে ফেলে। যা আপনার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। বোতলজাত জুস এবং কোমলপানীয়ও আপনার শরীরের একইভাবে ক্ষতি সাধন করে।
পরিশেষে, উচ্চতা নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।