ভ্রমণে যাওয়ার প্রস্তুতি
বছর ঘুরে আবার শীত চলে এসেছে। এই শীতে কোথায় ঘুরতে যাওয় যায় তা নিয়ে অনেকেই অনেক রকম ভ্রমণ পরিকল্পনা করছেন। কোথায় ভ্রমণ করবেন তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভ্রমণ প্রস্তুতি। ভ্রমণের আগে ভালো প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে ভ্রমণ কতটা আনন্দময় হবে। ভ্রমণ পূর্ববর্তী প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণের সময় কি কি বিষয় আগে থেকে জানা দরকার তা নিয়েও ভাবতে হবে। এই শীতে আপনার ভ্রমণকে আরও আনন্দময় করতে আপনার জন্য থাকছে শীতে ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়ে টিপস ও কিছু কৌশল।
কোথায় যাবেন : বেড়াতে যাওয়ার আগে প্রথমেই ভাবতে হয় কোথায় যাওয়া যায়? যেহেতু শীতে যাচ্ছেন তাহলে আরও ভাবতে হবে শীতকালের জন্য ভ্রমণের কোনো জায়গাগুলো উপযোগী। কোথায় যাবেন এই সিদ্ধান্ত নিতে হলে যা মাথায় রাখতে হবে তা হল, কতদিনের জন্য বেড়াতে যাবেন, আপনার বাজেট কত, সাগর, পাহাড়, বন, হাওর, নদী ঠিক কোন জায়গা আপনার বেশি পছন্দ, সঙ্গে কাদের নিয়ে যাবেন, যেখানে যাবেন সেখানের সুযোগ-সুবিধা কেমন। এগুলো চিন্তা করলেই আপনি পেয়ে যাবেন কোথায় যাওয়া উচিত।
কিভাবে যাবেন : ভ্রমণের জন্য পরিবহন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি বাস-লঞ্চ-ট্রেন-প্লেন-প্রাইভেট কার, কোনটায় যাবেন এটা নির্বাচন করা জরুরি। রাশ প্রিয়ডে ট্র্যাফিক জ্যাম এড়াতে স্থলপথ পরিবহন না করাই শ্রেয়। এক্ষেত্রে ট্রেন প্রথম পছন্দ হতে পারে, আর সামর্থ্যবান যারা, তাদের জন্য যদি এভেইলেবল থাকে তাহলে প্লেন। তবে যে পরিবহনই আপনি ব্যবহার করেন না কেন লক্ষ্য রাখবেন, আপনার জীবনের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার বিষয়টি।
কোথায় থাকবেন : বেড়াতে গেলে কোথায় থাকবেন তার ওপর আপনার ভ্রমণের অনেক আনন্দ নির্ভর করে। আপনার বাজেট, আপনার ভ্রমণ সঙ্গী কতজন, কেমন পরিবেশে থাকতে চান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন এই বিষয়গুলো ভেবেই কোথায় থাকবেন তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেখানেই যান না কেন অবশ্যই ভ্রমণকালীন আবাস আগে থেকে ঠিক করে যাওয়াই শ্রেয়। যদি আগে থেকে সম্ভব না হয় তাহলে ভালো মতো খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়া উচিত। ছুটির দিনগুলোতে ভিড় বেশি থাকে, হোটেল মোটেলের ভাড়া বেশি হয়, এই জিনিসটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। যদি সম্ভব হয় ছুটির দিনগুলো এড়িয়ে গেলে অনেক কিছুতেই খরচ কমে যাবে।
খোঁজ খবর : যেহেতু ঘুরতে গেলে হাতে বেশি সময় থাকে না তাই যেখানে যাবেন ঠিক করেছেন, তার আশপাশে কি দেখার আছে, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন, কবে কখন কি করবেন তা আগেই খোঁজ খবর নিয়ে একটা তালিকা করে ফেলুন। এতে আপনার সময় বাঁচবে যেমন তেমনি ঐখানের ভ্রমণ স্থানগুলো দেখতে পারবেন ভালো করে। সেখানকার আবহাওয়া ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে খরব নিয়ে যাবেন, পাশাপাশি সেখানকার জরুরি ফোন নাম্বার এবং লোকেশন সম্পর্কে তথ্য আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখুন। যেমন- নিকটস্থ থানা (পুলিশ), টুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেক্স নাম্বার, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, আবাসিক হোটেল, ব্যাংক ইত্যাদি। যদি ওই এলাকার স্থানীয় কোনো পরিচিত কেউ থাকে তাহলে তার নাম্বার নেবেন। চেষ্টা করুন সেখানকার স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে, তাহলে পরিবেশ সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনে নিতে পারবেন। এসব খোঁজ খবর আগে থেকেই করে রাখলে অনেক অনাকাক্সিক্ষত সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়।
ব্যাগ প্যাকিং : সঙ্গে কি কি নিবেন তা নির্ভর করবে আপনি কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন, কতদিন থাকবেন তার ওপর। যেমন পাহাড়ে বেড়াতে গেলে অবশ্যই ব্যাগের ওজন যত কম রাখা সম্ভব তার দিকে মন দিতে হবে। তবে যেখানেই যান না কেন ব্যাগ ভর্তি জিনিস না নিয়ে দেখেশুনে দরকারি জিনিস নেয়াই উত্তম। একটা ভারী ব্যাগপ্যাক আপনার ভ্রমণ আনন্দ মাটি করে দিতে পারে। তাই ব্যাগ গোছানোর সময় ভেবে দেখুন আপনার একান্ত কি কি জামাকাপড় লাগতে পারে? সেগুলোর বাইরে সর্বাধিক একটি কিংবা দুটি জামা বেশি নিতে পারেন। টুথপেস্ট, ব্রাশ, আন্ডারওয়ার, গামছা বা তোয়ালে, ক্যাপ, জুতা, বেল্ট ইত্যাদি ছাড়াও অনুসাঙ্গিক আর কি কি প্রয়োজন হতে পারে তার একটা লিস্ট করুন। লিস্ট ধরে ঠিক চিহ্ন দিয়ে একটা একটা জিনিস ব্যাগে ঢুকান, এতে করে দরকারি কোনো কিছু ভুলে ফেলে যাবেন না। তবে যাই লাগেজে ঢোকান না কেন একটা জিনিশ মনে রাখবেন, এই লাগেজ কিন্তু আপনাকেই বহন করতে হবে। প্রয়োজনীয় জামাকাপড়, জুতা, কসমেটিকস আলাদা করে প্যাক করুন, যাতে স্থান সঙ্কুলান হয় আবার জিনিসপত্র এলোমেলো হবে না।
ভ্রমণের পোশাক : শীতকালে গাঢ় রঙের মোটা তাপনিরোধক কাপড়ের তৈরি জামা পরিধান করুন। তবে খেয়াল রাখবেন শীতের কাপড়ের ওজন যত সম্ভব যেন কম হয়। তা না হলে আপনার ব্যাকপ্যাক ভারী হবে শীতের পোশাকে। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য সঙ্গে করে মাফলার, মোজা, গ্লাভস, হুডসহ কাপড় পরিধান করতে পারেন। জামার রং অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমরা ভ্রমণে বের হওয়ার সময় লক্ষ্য রাখা উচিত। উজ্জ্বল রঙের কাপড়ে ছবি সুন্দর হয়। তবে পাহাড় বা বনাঞ্চলে ভ্রমণের সময় অবশ্যই উজ্জ্বল কোনো রঙের জামা পরিধান করা উচিত নয়। প্রচুর হাঁটতে হবে এমন ট্যুরে সাদা রঙের জামাই শ্রেয়।
দরকারী ডিভাইস : বেড়াতে যাবার আগে দেখে নিন আপনার প্রয়োজনীয় ডিভাইসগুলো সঙ্গে নেয়া হয়েছে কিনা। আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চেকলিস্টের সঙ্গে মিলিয়ে নিন। মোবাইল ফোন ছাড়া বর্তমানে জীবন কল্পনা করা যায় না তাই শহর থেকে দূরে গেলেও সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে মোবাইল ফোন নিয়ে নিন। রওনা দেয়ার আগে পুরো চার্জ দিয়ে নিন। সঙ্গে করে ফোনের চার্জার নিতে ভুলবেন না। আপনার বেড়ানোর সুন্দর স্মৃতিগুলো ধরে রাখার জন্য চেষ্টা করবেন একটা ভালো ক্যামেরা সঙ্গে নিতে। আর তার সঙ্গে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন ক্যামেরার ব্যাটারির চার্জ ফুল থাকে। সঙ্গে করে নিতে পারেন এক্সট্রা ব্যাটারি।
ভ্রমণে রোগবালাই ও ওষুধ : শীতে সর্দি-জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, নাকের প্রদাহ, চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া প্রভৃতি রোগ হয়ে থাকে। সম্ভব হলে প্রয়োজন মতো সঙ্গে ওষুধ রাখুন। জ্বর, পেট খারাপ, অ্যাসিডিটি, বমি, মাথা ধরার ওষুধ নিয়ে নিন। আরও নিন ব্যান্ড এইড, অ্যান্টিসেপটিক, পরিমাণ মতো তুলা ও গজ। এগুলো সঙ্গে থাকলে অনেক বড় বিপদ থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সঙ্গে নেয়া এসব ওষুধপত্রের একটি তালিকা আগেভাগেই তৈরি করে রাখতে পারেন। প্রেশার, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়ে নিন। এই শীতে ভ্রমণের সময় ত্বক ও হাত-পা, চুলের বিশেষ যতœও নেয়া প্রয়োজন। সানপ্রোটেক্ট লোশন ও ক্রিম সূর্যের আলোতে বের হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে ব্যবহার করুন। ভ্রমণে যদি প্রচণ্ড গরম অনুভব হয় তবে প্রচুর পরিমাণ পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বাচ্চাদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
টাকা পয়সা : ভ্রমণে কত টাকা খরচ করবেন, সে ব্যাপারটি আগে থেকেই হিসাব করে ঠিক করে নিন। তারপর বাজেট অনুসারে খরচ করুন। পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা নিয়ে যাওয়া ভালো। একটা আনুমানিক তালিকা করে ধারণাকৃত অঙ্ক থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি প্রস্তুতি থাকা ভালো। টাকা বহনে ভালো না লাগলে সাবধানতার সহিত কার্ড বহন করতে পারেন। বিকাশ একাউন্ট বা মোবাইলে টাকা লেনদেন করা যায় এমন কোনো একাউন্ট থাকলেও খুব কাজে লাগবে। বিভিন্নভাবে ভাংতি টাকার ব্যবস্থা রাখবেন সবসময়, ছোট একটা বিষয় অনেক সময় আমাদের বিপদে ফেলে দিতে পারে। মোবাইলে ব্যালেন্সও বেশি করে নিয়ে নেবেন।
ভ্রমণের খাদ্য : টুরিস্ট রেস্টুরেন্টগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। যেখানে বেড়াতে গিয়েছেন সেখানে আশপাশে ঘুরে, লোকাল বসবাসকারীরা যেখানে খায় সেখানে খাওয়া-দাওয়া সারবেন। খরচটা কমবে উল্লেখযোগ্যভাবে। ভ্রমণের খাবার-দাবারের ব্যাপারে প্রথমে যে জিনিসটি সবার মাথায় রাখা উচিত তা হল হাইজেনিক ফ্যাক্টর। আপনি যে খাবারটি খাচ্ছেন তা স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা যাচাই করে নেয়া উচিত।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন অনলাইন প্রতিনিধি। লাইফস্টাইল বিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।