হায়াত বৃদ্ধিকারী আমলসমূহ
জামাআতে নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া-
একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে জামাআতে নামাজ পড়লে পঁচিশ বা সাতাশ গুণ বেশি নেকি পাওয়া যায়, যে ব্যক্তি এই নেকীর কথা শোনা মাত্রই অতি গুরুত্বের সাথে আমল করবে তার হায়াত দীর্ঘায়ীত করতে পারবে।
আবুহুরাইরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, একাকী নামাজ আদায় করার চাইতে ইমামের সাথে যেকোনো ওয়াক্তের নামাজ জামাআতে পড়লে তাতে পঁচিশ গুণ বেশি নেকী হয়। (সহীহ মুসলিম- ৬৪৯)
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. বলেন, একাকী নামাজ আদায় করার চাইতে ইমামের সাথে জামাআতে নামাজ আদায় করলে সাতাশ গুণ বেশি নেকী হয়। (সহীহুল বুখারী- ৬০৯)
অর্থাৎ একজন লোক পঁচিশ থেকে সাতাশ বছর ব্যাপী একাকী ঘরে নামাজ পড়ে যে পরিমাণ নেকী অর্জন করেছে, তার তুলনায় যে ব্যক্তি ইমামের সাথে জামাআতে নামাজ আদায় করেছে সেই ব্যক্তি এক বছরেই পঁচিশ বা সাতাশ বছরের নেকী অর্জন করে ফেলেছে।
তাহলে একটু ভেবে দেখুন, মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিটের জন্য আপনার ঘর থেকে একাকী হয়ে আল্লাহর ঘর মসজিদে গিয়ে ফরজ নামাজ পড়ে পচিশ থেকে সাতাশ গুণ নেকী লাভ করে পুণরায় আল্লাহর ঘর হতে আল্লাহর রহমতে বাড়ি ফিরতে পারছেন।
সুন্নত/নফল নামাজ ঘরে আদায় করা-
মসজিদে মানুষের সামনে সুন্নত/নফল নামাজ আদায় করার চাইতে নিজ ঘরে একাকী সুন্নত/নফল নামাজ আদায় করলে পঁচিশ বা সাতাশ গুণ নেকী পাওয়া যাবে। এটা ফরজ নামাযের সম্পূর্ণ বিপরীত নির্দেশ।
সাহাবী সোহাইব রুমী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষের উপি ̄Íতি রয়েছে এমন স্থানে (মসজিদ বা জনসমাবেশ স্থলে) একবার সুন্নত/নফল নামাজ আদায়ের তুলনায় লোকচক্ষুর আড়ালে ঘরে একবার সুন্নত/নফল নামাজ আদায় করলে পঁচিশ গুণ নেকী পাবে। (সহীহুল জামে- ৩৮২১)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ঘরে সুন্নত/নফল নামাজ আদায়ের তুলনায় লোকচক্ষুর আড়ালে যেখানে কেউ তাকে দেখতে পায় না এমন স্থানে সুন্নত/নফল নামাজ আদায়ের ফজিলত তেমনি, ফরয নামাজের ফজিলত নফল নামাজ আদায়ের চাইতে যেমনি বেশী । (সহীহ আত তারগীব- ৪৪১, মু’জামুল কাবীর-৭৩২২)
অর্থাৎ যে লোক পঁচিশ বছর ব্যাপী মসজিদে সুন্নত/নফল নামাজ আদায় করেছে এক বছরেই সেই সুন্নত/নফল নামাজ ঘরে আদায় করে পঁচিশ গুণ নেকী লাভ করতে পারবে, যদি সেই সুন্নত/নফল নামাজ একান্ত ঘরে আড়ালে আদায় করেন যেখানে তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না।
অতএব, আপনি এমনভাবে এমন স্থানে সুন্নত/নফল নামাজ আদায় করুন যেন কেউ আপনাকে দেখতে পাচ্ছে না। তাহলে আপনি মসজিদে গিয়ে ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ নেকী লাভ করতে পারবেন সেই ফরজ নামাজগুলোর সুন্নত/নফল নামাজ ঘরে আদায় করলে ফরজের সমপরিমাণ পঁচিশ গুণ নেকী লাভ করবেন।
হায়াত বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য আমল হলো নফল নামাজ।
চাশতের নামাজ-
মানুষের দেহে তিনশত ষাটটি জোড়া আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে আল্লাহর শোকর আদায় করার জন্য এই জোড়াগুলোর প্রত্যেকটির জন্য প্রতিদিন সদকাহ করার নির্দেশ করেছেন।
সাহাবী ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আদম সন্তানের দেহে তিনশত ষাটটি জোড়া রয়েছে। প্রত্যেক জোড়ার জ্ন্যই প্রতিদিন সদকাহ আদায় করা ওয়াজিব। উত্তম কথা বলা সদকাহ, কোন ভাইকে কোন বিষয়ে সহযোগিতা করা সদকাহ, কাউকে যদি সামান্য পানিও পান করানো হয় এতে সদকাহ করার নেকী রয়েছে। রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু বা মানুষ আঘাত পাবে এমন সবকিছু সরিয়ে ফেললেও সদকাহ করার নেকী পাবে (মু’জামুল কাবীর- ১১০২৭)।
এমন অসংখ্য দান-খয়রাত সদকাহর নেকী প্রতিদিন কতইনা অল্প সময়ে লাভ করতে পারা যায়। আর এই তিনশ ষাটটি জোড়ার জন্য প্রতিদিন যে সদকাহ আদায় করতে হয়, যদি প্রতিদিন দুই রাকআত চাশতের সকাল-৮- ১০টায়) নামাজ পড়ে, তবে তা প্রতিদিনের সদকাহ আদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। এজন্য শুধু দুই রাকাত নামাজ পড়া ব্যতীত কিছুই করতে হবে না।
সাহাবী আবু যার আল-গিফারী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের শরীরে প্রতিটি জোড়ার জন্য প্রতিদিন সদকাহ করতে হবে। “সুবহানাল্লাহ” বলা দ্বারা সদকাহর নেকী পাওয়া যায়, “আলহামদুলিল্লাহ” বললেও সদকাহর নেকী পাওয়া যায়। প্রতিবার “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার দ্বারাও সদকাহর নেকী পাওয়া যায়। “আল্লাহ আকবার” বলার দ্বারাও নেকী পাওয় যায়, ভালো কাজের নিদের্শ দেওয়া ও অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করা দ্বারাও সদকাহর নেকী পাওয়া যায়।
আর উপরোল্লেখিত শারীরিক জোড়াসমূহের জন্য সদকাহর নেকী প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু দুই রাকাত “চাশতে”র নামাজ আদায় করলেই সদকাহর নেকী লিখা হয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম- ৭২০)
অতএব ঐ ব্যক্তির জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ, যিনি সময় নিয়ে এ নামাজটি আদায় করে নিতে পারেন। এ নামাজ দ্বারা অসংখ্য নেকী অর্জন করতে সক্ষম হবে, আর মহিলারা ঘরেই বেশীর ভাগ সম কাটায়, তাই তারাও এ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে অসংখ্য নেকী লাভ করতে পারে।
ইশরাকের নামাজ-
খুব কমসংখ্যক মসজিদেই আজকাল এ সুন্নতটির আমল করা হয়। এর কারণ মসজিদের কিছু ইমাম, মুয়ায্যিন ও খাদিম এমন রয়েছেন, যারা চান না কেউ নামাজের পর মসজিদে অবশিষ্ট থাকুক। এই ভয়ে যে, মসজিদে বাজে আড্ডা বা অনর্থক কোন কাজ হতে পারে। এ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে হজ ও উমরাহর পূর্ণ নেকী লাভ করা যায়।
সাহাবী আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের নামাজ আদাযের পর সূর্যোদয় পযর্ন্ত বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবে। অতঃপর সূর্যোদয়ের পর দুই রাকআত নামাজ পড়বে, তার জন্য একটি হজ ও একটি উমরাহর নেকী রয়েছে। যে হজ ও উমরাহ হবে পরিপূর্ণ পরিপূর্ণ পরিপূর্ণ। (সুনানে তিরমিযী- ৩/৬৮, সিলসিলায়ে সহীহাহ্- ৭৪৭)
আপনি যদি খুবই ব্যস্ত থাকেন তাহলে সাপ্তাতিক ছুটির দিনে এ আমলটি করতে পারেন। এভাবে আপনি সপ্তাহে একটি হজ ও উমরাহর নেকী লাভ করতে পারেন। এভাবে মাসে চারটি হজ ও উমরাহ এবং বছরে বায়ান্নটি হজ ও উমরাহ করার সমপরিমাণ নেকী লাভ করতে পারবেন। মহিলারাও ফজরের নামাজের পর তাদের নামাজস্থলে সুর্যোদয় পর্যন্ত বসে জিকির দু’আ করার পর এই দুই রাকআত নামাজ আদায় করলে ঐ নেকী লাভ করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
সালাতুল আউয়াবীন-
হাদীসে একই নামাজকে তিনটি নামে উল্লেখ করা হয়েছে। পূর্ব আকাশে সূর্য উঠার সাথে সাথে যে নামাজ পড়া হয় তাকে “সালাতুল ইশরাক” বা ইশরাকের নামাজ বলা হয়। সূর্য আরেকটু উপরে উঠলে (সকাল ৮-১০টায়) যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে “সালাতুয জোহা” চাশতের নামাজ বলা হয়। সূর্য আরও উপরে অবস্থানকালে (জোহর নামাজের আউয়াল ওয়াক্তের পূর্বে ১০-১১টায়) যে নামাজ আদায় করা হয় তাকে “সালাতুল আউয়াবীন” বা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনশীল বান্দাদের নামাজ বলা হয়।
যেমন- সাহাবী যায়েদ ইবনু আরকাম রা. বলেন, তিনি কিছু লোককে চাশতের নামাজ আদায় করতে দেখেন। অতঃপর বলেন, তাদের জানা আছে যে, এই সময়ের চেয়ে অন্য সময়ে পড়া অধিক উত্তম, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সালাতুল আউয়াবীন” তখন পড়বে যখন উটের বাচ্চা রৌদ্রের তাপে ছটপট করবে। (সহীহ মুসলিম- ১৭৮১, মিশকাত- ১৩১২)
অতএব মাগরিবের নামাযের পর “সালাতুল আউয়াবীন” পড়ার প্রমাণে কোন সহীহ দলীল নেই। উক্ত মর্মে যে সকল হাদীস পাওয়া যায় তার সবই জাল হাদিস। সুতরাং জাল ও যঈফ হাদিসের উপর আমল করা পরিত্যাগ করে সহীহ হাদীসের উপর আমল করা একজন নামাজীর কর্তব্য।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন অনলাইন প্রতিনিধি। ইসলাম বিভাগে যেকোন তথ্য, প্রতিবেদন, গবেষণা, মাসালা এবং অলোচনা নিয়ে লিখুন আমাদের কাছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।