সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেয়া উচিৎ?
তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। রাজনৈতিক দলগুলো এখন ব্যস্ত সময় পার করছে প্রার্থী মনোনয়নে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সভা-সেমিনারসহ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে।
এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই; আছে নির্বাচিত সরকার। এ নিয়ে বিরোধী দল বা বিরোধী জোট প্রথমে আপত্তি জানালেও অবশেষে নির্বাচনে এসেছে, যা স্বস্তির বিষয়। গত নির্বাচনে যে রকম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তা দেখে জনগণ স্বাভাবিকভাবে ভীত। আশা করি, এবারের নির্বাচনে সেরকম কিছু ঘটবে না।
নির্বাচন আসছে, একাধিক প্রার্থীও আছেন; কিন্তু প্রশ্ন হল- কাকে ভোট দিব? সব দল বা জোটই সৎ, যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থী দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আদৌ কি আমরা সৎ, যোগ্য ও মেধাবী প্রতিনিধি পাব; যাদের আমরা দ্বিধাহীন চিত্তে ভোট দিতে পারব! অনেক প্রার্থীর ভিড়ে সৎ, যোগ্য ও মেধাবীরা নিঃসন্দেহে জয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক সময়ই তা হয় না। কারণ টাকার কাছে আমরা বিক্রি হয়ে যাই, দলের কাছে আমরা বিক্রি হয়ে যাই। আমাদের নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ বিসর্জন দেই দল ও টাকার কাছে। তাই তো সংসদে দেখা যায় অযোগ্য, অসৎ, নীতি-নৈতিকতাহীন জনপ্রতিনিধি। তাদের দ্বারা সরকার তো বটেই, দেশ ও জাতি বিতর্কিত হয় এবং অস্বস্তিতে থাকে।
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার অবশ্যই সৎ, যোগ্য ও মেধাবীদের নির্বাচিত করা উচিত। আগের নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবারের নির্বাচন একটু ভিন্ন। এবার সব দলই জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করছে। তাই প্রার্থীও অনেক। এখান থেকে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে জনগণের অসুবিধা হওয়ার কথা না; যদি না তারা দল ও টাকার কাছে বিক্রি না হয়। এ নির্বাচনে অপশন অনেক। তাই মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো সেদিকে নজর রাখবে। হয়তো আগের নির্বাচনগুলোয় সৎ ও যোগ্য প্রার্থী পেতে অনেক সমস্যা হয়েছে; কিন্তু এবার তা হওয়ার কথা নয়। দলের আনুগত্যের চেয়ে দেশের প্রতি বেশি অনুগত থাকবে- এমন প্রার্থীই বাছাই করা উচিত।
আমরা তাকেই ভোট দিব, যার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। যে জনগণের স্বার্থে কাজ করে; আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয় না। সংসদ সদস্য হওয়ার পরে যাদের সম্পদ শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাদের ভোট দিব না। যারা জনগণের কথা চিন্তা করে না, তাদের ভোট দিব না। যারা এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে না, তাদের ভোট দিব না। যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে, তাদেরকেও ভোট দিব না। আমরা তাকেই ভোট দিব- যে জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ায়, বিপদের সময় যাকে পাশে পাওয়া যায়। যারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে ভাবে; যারা স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে।
এছাড়াও এমন প্রার্থীকে আমরা নির্বাচনে জয়ী দেখতে চাই- যাদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয় রয়েছে। যারা ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর এবং যাদের সুযোগ্য নেতৃত্বের সুফল হিসেবে দেশে আর কোনোদিন হরতাল-অবরোধ ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে না।