বিক্রয়ের রেকর্ড গড়ল অমর একুশে গ্রন্থমেলা
মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিন ছিলো গতকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি)। যদিও গ্রন্থমেলার ঐতিহ্য ভেঙ্গে প্রথম বারের মতো লেখক ও প্রকাশকদের দাবির প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গ্রন্থমেলার সময় বৃদ্ধি পেয়েছে আরও দুদিন। মেলা চলবে দুই মার্চ পর্যন্ত। এবছর গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৫টি গ্রন্থ। যা গতবছরের তুলনায় অনেক বেশি এবং বিক্রির দিক থেকেও এবছর অনেক এগিয়ে। এবছর গ্রন্থমেলায় বিক্রি হয়েছে আনুমানিক ২ কোটি ১৫ লাখ ৯১ হাজার টাকার গ্রন্থ। যা গতবারের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
এই বছর প্রকাশিত গ্রন্থের ভিতরে মানসম্পন্ন গ্রন্থের সংখ্যা ১১৫১টি বলে জানিয়েছে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি গণমাধ্যমকে জানান।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৩০মিনিটে অনুষ্ঠিত হয় গ্রন্থমেলার সমাপনী ও পুরস্কার প্রদান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
সমাপনী অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘গ্রন্থমেলা উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য দেশবাসীর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ২০১৯-এর গ্রন্থমেলা অতীতের যেকোনোবারের তুলায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। প্রথমবারের মতো গ্রন্থমেলার আয়োজনে এবার যুক্ত ছিল- লেখক বলছি মঞ্চ।’
তিনি আরো বলেন, ‘কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, বাচিকশিল্পীদের পরিবেশনা এবং নান্দনিক সমাপনী আয়োজন। তবে মেলার শেষ মুহূর্তে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকাশকদের যে ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি করেছে সে জন্য আমরা সমবেদনা ও দুঃখ প্রকাশ করছি। এই দুর্যোগ আবারও প্রমাণ করেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের জন্য স্থায়ী মেলা মাঠ বরাদ্দের কোনো বিকল্প নেই যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের মাঝে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পায়নি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ এমপি বলেন, ‘একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলা সারাদেশের জ্ঞান জগতে যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে তা অবিস্মরণীয়। এটি শুধু বিকিকিনির মেলা নয় বরং একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে।’
এছাড়াও এবছর প্রথম প্রবর্তিত হয় কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কবি নির্মলেন্দু গুণকে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হয়।
এছাড়াও ২০১৮ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯, ২০১৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে গোলাম মুরশিদের ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত : নজরুল-জীবনী’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে, মইনুদ্দীন খালেদের ‘মনোরথে শিল্পের পথে’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুক্সকে এবং মারুফুল ইসলামের ‘মুঠোর ভেতর রোদ’ গ্রন্থের জন্য চন্দ্রাবতী একাডেমিকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হয়। ২০১৮ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯ প্রদান করা হয়।
২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মধ্যমা (এক ইউনিট), বাতিঘর (বহু ইউনিট), পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.-(প্যাভেলিয়ন)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হয়।
এদিনে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন- সলিমুল্লাহ খান, সাগুফতা শারমিন তানিয়া, সুমন রহমান, মিছিল খন্দকার ও নাহিদা আশরাফী।
উল্লেখ্য, মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এর সমাপনী আয়োজনের অংশ হিসেবে গতকাল রাতে স্বাধীনতাস্তম্ভ সংলগ্ন মে সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হয়েছিলো। অনুষ্ঠানে কবিতাপাঠ করবেন প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণ।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।