মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ বুদ্ধিজীবী
১৪ ডিসেম্বর রাতের তীব্র অন্ধকার-কালো স্ক্রিন ফুটে ধীরে ধীরে জাতির সামনে এসে মাথা তুলে দাঁড়ায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি। মরদেহ, মাথার খুলি, কঙ্কাল-এর ক্লিপিং নিয়ে জ্বলজ্বল করে মহান বুদ্ধিজীবীদের পবিত্র স্মৃতি।
জাতির সাহসী সন্তান, বুদ্ধিজীবীগণ যেন সমগ্র জাতির সামনে অভয়বাণীর মতো আবৃতি করেন কালজয়ী কথামালা:
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী
ভয় নাই, ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’
বাঙালির জীবনে স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের পথে তাদের কথা ও বাণী শোনা গিয়েছিল। রচিত হয়েছিল তাদের সাহসিক ভাষ্য। উচ্চারিত হয়েছিল তাদের জাগরণী গান। তারা ছিলেন মানবতাবাদী অধ্যাপক, দেশপ্রেমিক সাংবাদিক, দরদী গায়ক, মাটি ও মানুষের প্রিয় শিল্পী। তারা ছিলেন এ জাতির মহত্তম সন্তান।
বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবী ছিলেন তারা। দেশের কথা বলেছেন জীবনভর। দেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার কথা, অধিকার ও মানবতার কথা বার বার সাহসের সঙ্গে বলেছিলেন তারা।
জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে সুতীব্রভাবে উজ্জীবিত করেছিলেন আমাদের বুদ্ধিজীবীরা। জাতির ভাগ্যাকাশ থেকে অমানিশা দূর করতে আলোর মশাল নিয়ে চলেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের আগে হানাদার পাকিস্তানি ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা নির্মমভাবে হত্যা করে জাতির এই মেধাবী সন্তানদের। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার চক্রান্তে পরাজয়ের আগে আগে হানাদাররা হত্যা করে বুদ্ধিজীবীদের। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী আল বদর সদস্যরা মানবতার বিরুদ্ধে চরম অপরাধের মাধ্যমে নিরস্ত্র শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের নিধন করে।
রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় ক্ষত, বিক্ষত, নিহত বুদ্ধিজীবীদের লাশের সারি। কারো চোখ তুলে ফেলা হয়েছিল। কারো মুখমণ্ডল বিকৃত করে দেওয়া হয়েছিল। সবার শরীরেই ছিল বর্বর অত্যাচারের চিহ্ন। চরমতম নির্মমতায় ও পাশবিক আক্রোশে হত্যা করা হয় জাতির বুদ্ধিজীবীদের।
ঘর থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতন করে এইসব বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। কারণ, হানাদাররা জানতো, জাতিকে জাগিয়ে দিতে পারে বুদ্ধিজীবীরা। তাই, নিশ্চিত পরাজয়ের আগে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসররা।
স্বাধীনতার লাল সূর্যোদয় তারা দেখে যেতে পারেন নি। কিন্তু তাদের সবটুকু রক্ত মিশে আছে আমাদের স্বাধীনতার রক্তিম আলোয়। তাদের পুরো অস্তিত্ব মিশে আছে বাংলাদেশের পবিত্রতম লাল-সবুজ পতাকায়। তারা অমর হয়ে আছেন বাংলাদেশ নামে সবুজ-শ্যামল, স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ডে।
জাতির উদয়ের পথে মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে আছেন মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ বুদ্ধিজীবীরা। আমাদের সংগ্রামে, অর্জনে তারা আছেন। চেতনার গগনস্পর্শী বাতিঘর হয়ে একাত্তরের শহীদ মহান বুদ্ধিজীবীগণ আছেন বাঙালি জাতিসত্তার গভীর মর্মমূলে। তারা আছেন আলোর পথের যাত্রী হয়ে বাংলাদেশের অতল অস্তিত্বে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতির অগ্রণী সন্তানদের প্রতি আওয়ার বাংলা এর বিনম্র শ্রদ্ধা।
আজ গভীর বেদনা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।