বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন এরশাদ
মন্ত্রিসভায় যোগ দেবে না ২২ আসন পেয়ে একাদশ সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হবেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। তার ছোট ভাই জিএম কাদের হবেন বিরোধীদলীয় উপনেতা। জাতীয় পার্টি থেকে কেউ মন্ত্রী হবেন না। গতকাল শুক্রবার ‘সকলের অবগতির জন্য’ শিরোনামে জারি করা নির্দেশনায় এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন এরশাদ। তবে দলে রওশন এরশাদের অনুসারীরা মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে আগ্রহী।
জাতীয় পার্টির দলীয় অবস্থান জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকারকে অনুরোধ করেছেন এরশাদ। অসুস্থতার কারণে এখনও শপথ নিতে পারেননি তিনি। এ ছাড়া দশম সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের ভূমিকা এবার কী হবে- সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি এরশাদের নির্দেশনায়।
জাতীয় পার্টির সূত্র জানিয়েছে, রওশন এরশাদের অনুসারীরা এরশাদের নির্দেশনা মানতে নারাজ। তারা মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে চান। রওশনকেই বিরোধীদলীয় নেতার পদে চান তারা। এরশাদের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে মানতে রাজি নন। ময়মনসিংহ-৮ আসন থেকে পুনর্নির্বাচিত সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। তিনি আওয়ার বাংলাকে বলেছেন, ‘দেখা যাক কী হয়।’
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের আওয়ার বাংলাকে বলেছেন, এরশাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা জাতীয় পার্টির সব নেতাকর্মীকে মানতে হবে। এমপিদেরও মানতে হবে।
অবশ্য গত মঙ্গলবার জিএম কাদের জানিয়েছিলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হবেন না। মহাজোটের শরিক হিসেবে নির্বাচন করা জাতীয় পার্টি সরকারেই থাকতে পারে। গতকাল তিনি বললেন, ‘দেশ ও দলের স্বার্থে’ আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।
রওশন এরশাদের সমর্থক একজন এমপি আওয়ার বাংলাকে বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালনের মতো শারীরিক সক্ষমতা এরশাদের নেই। ছোট ভাইকে প্রতিষ্ঠিত করতেই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলীয় গঠনতন্ত্রের ২২(২) ধারা অনুযায়ী, সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচনের ক্ষমতা এমপিদের হাতে। এরশাদ যে প্রক্রিয়ায় নিজেকে বিরোধীদলীয় নেতা ও ছোট ভাইকে উপনেতা ঘোষণা করেছেন, তা গঠনতন্ত্রসম্মত নয়। সংসদীয় দলের পরবর্তী সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা আওয়ার বাংলাকে বলেছেন, এরশাদের সিদ্ধান্তে গঠনতন্ত্রের ব্যত্যয় হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, আগামী সোমবার শপথ নেবেন রংপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত এরশাদ। সেদিন সংসদীয় দলের সভায় এরশাদের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হবে।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে চারগুণের বেশি আসন পায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি। মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টির ২৫ প্রার্থীর ২১ জনই জয়ী হন। দ্বিতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টি সরকারে থাকবে না বিরোধী দলে বসবে, ভোটের পর থেকেই এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। গত বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত এমপিদের শপথের পর জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের প্রথম সভায় মতবিরোধের কারণে নেতা নির্বাচন করা যায়নি। জাতীয় পার্টি সরকারে না বিরোধী দলে থাকবে- এ সিদ্ধান্তও ঝুলে ছিল। জিএম কাদের জানিয়েছিলেন, কোনো ভূমিকাতেই তাদের আপত্তি নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে কোন ভূমিকায় থাকবেন তারা। বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন, তাও নির্ভর করছে তার ওপর। এরশাদের পরিবারের একজন সদস্য আওয়ার বাংলাকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই বিরোধী দলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এরশাদ। দলটি থেকে কাউকে মন্ত্রী না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হচ্ছেন তারই সিদ্ধান্তে।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিলেন এরশাদ। সেবার রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একাংশ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩৪ আসন পেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছিল। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসলেও মন্ত্রিসভাতেও যোগ দিয়েছিল তারা। মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী ও দু’জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। এ নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে সমালোচনা রয়েছে। জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বলা হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা এরশাদ ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করেন এরশাদ। রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে এরশাদ অনেকবার বলেছেন, প্রকৃত বিরোধী দল হওয়ার জন্য তারা মন্ত্রিসভা ছাড়বেন। কিন্তু এ ঘোষণা কখনই কার্যকর হয়নি।
দশম সংসদে শূন্য ছিল বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ। প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার এ পদে এরশাদের পছন্দ ছিল জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ চেয়েছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদকে। দু’জনই পছন্দের ব্যক্তির জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু দুই পক্ষের বিরোধে তাদের কেউ শেষ পর্যন্ত উপনেতা হতে পারেননি। জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, এবারও ফিরোজ রশীদ উপনেতা হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদ বেছে নিয়েছেন ছোট ভাইকে। গত মঙ্গলবার তাকে দলের ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন তিনি।
জাতীয় পার্টির আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সংসদীয় দলের সভাতে রওশন এরশাদও মত দেন, জাতীয় পার্টি থেকে কারও মন্ত্রী না হওয়া উচিত। আগেরবার দল থেকে তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকলেও দলের লাভ হয়নি। এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে পুনর্নির্বাচিত শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, ‘দলের কাজে না আসলে, দল থেকে বের করে দেন’। মন্ত্রী হতে আগ্রহী ছয় নবর্নির্বাচিত এমপিও ছিলেন সরকারে যোগ দেওয়ার পক্ষে। বাকিরাও তাদের পক্ষ নেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় পার্টি থেকে কাউকে মন্ত্রী করা হবে কি-না, এ সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।