বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে খরচ হবে ২ কোটি টাকা
রাজধানীর হাতিরঝিলে আদালতের রায়ে অবৈধ বিজিএমইএর ভবনটি ভাঙতে দুই কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, এই ভবন ভাঙতে কী পরিমাণ টাকা লাগতে পারে, তার একটা মোটামুটি অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছিল আগেই। দুই কোটি টাকার মতো লাগতে পারে।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করে জানান, ভবনের মালামাল বিক্রি করে এই টাকাটা উঠে যাওয়ার কথা।
তবে ধ্বংসাবশেষ বিক্রির টাকায় খরচ মেটাতে না পারলে বিজিএমইএর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
ইতিমধ্যেই রাজউক তিন মাসের মধ্যে ভবন ভাঙার শর্ত দিয়ে দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল কেনায় আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করেছে। আগ্রহীদের আগামী ২৪ এপ্রিল বিকাল ৪টার মধ্যে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বহুতল ভবন ভাঙার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তিন মাসের মধ্যে ভবন ভেঙে মালামাল অপসারণ করতে হবে। ভাঙার ব্যাপারে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
দরপত্রে বলা আছে, ভবন ভাঙার জন্য আলাদা কোনো অর্থ দেয়া হবে না। যারা ভবন ভাঙবেন তারাই মালামাল কেনার দরপত্র দাখিল করতে পারবেন। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ মূল্য উল্লেখ করবেন, তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।
বিজিএমইএকে ভবন ভাঙার খরচ দিতেই হবে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও হাইকোর্টে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা প্রশ্নে মামলার অ্যামিকাস কিউরিয়া মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের রায়েই বলা আছে তাদের খরচ দিতে হবে। নির্দেশ তো আর চেঞ্জ হয় নাই।
হাতিরঝিলের ভবন ছেড়ে উত্তরার নতুন ভবনে উঠে যাওয়া বিজিএমইএর বিদায়ী সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো কথা হয়নি। সেটা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা বসব।
উল্লেখ্য, গার্মেন্টস কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রধান কার্যালয়টির নাম ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’। এটি বিজিএমইএ ভবন নামে পরিচিত। অ্যাসোসিয়েশনের কর্ণধাররা রাজউকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি খালের জলাশয়ের মাঝখানে ১৫তলা ভবনটি নির্মাণ করেন। এ নিয়ে আদালতে মামলা হলে আদালত বিজিএমইএ’র নিজ খরচে ভবনটি ভাঙার পক্ষে রায় দেন।
বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন শুরুতেই অভিযোগ তুলেছিল, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না নিয়ে এবং উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ ভঙ্গ করে বেগুনবাড়ি খালের একাংশ ভরাট করার মাধ্যমে ওই ভবন তোলা হয়েছে।
সংবাদপত্রে প্রতিবেদন নজরে আনা হলে ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ আপিল করলে ২০১৬ সালের ২ জুন তাও খারিজ হয়ে যায়।
আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘বেগুনবাড়ি খাল’ ও ‘হাতিরঝিল’ জলাভূমিতে অবস্থিত ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এক্ষেত্রে ভবন ভাঙার খরচ আবেদনকারীর (বিজিএমইএ) কাছ থেকে আদায় করবে তারা (রাজউক)
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।