বারুদ ফাইনালের অপেক্ষায় মিরপুর!
প্রশ্নটা শুনে কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস পরিসংখ্যানের আশ্রয় নিলেন-‘এগিয়ে থাকার দিক থেকে বলতে পারেন যে আমরা দুটো ম্যাচ ওদের সঙ্গে জিতেছি। আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। কারণ একটি দলকে যখন দু’বার হারাবেন তখন আল্টিমেটলি প্রতিপক্ষ দল কিন্তু আমাদের নিয়ে বেশি চিন্তা করবে। এটাই আমার কাছে মতে হয় ইতিবাচক দিক।’
ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের উত্তরে একটু কুটনীতিক ধাঁচ-‘পেছনের দুটো ম্যাচে আমার দল দুর্দান্ত কায়দায় ক্রিকেট খেলেছে। আমরা এখন ফাইনালে। দলের বাকিদের কাছে এরচেয়ে বেশি আর কি চাইতে পারি। আমি চাই এখন এই ফাইনাল ম্যাচ আমার পুরো দল উপভোগ করুক।’
শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারির রাতে ষষ্ঠ বিপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া দুই দলের অধিনায়কের মধ্যে বেশকিছু মিল আছে। দুজনেই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দলের মিডলঅর্ডার সামাল দেন। তবে এসব সাধারণ মিলের চেয়ে অসাধারণ মিল হলো-দুজনেই কিন্তু এর আগে বিপিএলের ট্রফি হাতে নিয়ে উল্লাস করার সুযোগ পেয়েছেন। অর্থাৎ ফাইনালে জেতা এই দুজনের কারোর জন্যই নতুন কিছু নয়।
তবে হ্যাঁ, যদি শুক্রবার রাতের ফাইনালে জিতেন তবে এই তথ্যে ইমরুলের জন্য নতুন বিষয়টা হবে-আগে জিতেছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে, এবার অধিনায়কের মর্যাদায়!
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে শুক্রবার রাত সাতটায় শুরু হওয়া জমাট ফাইনালে শক্তির বিচারে ঢাকা-কুমিল্লা উভয় দল প্রায় সমান অবস্থানে। গ্রুপ পর্বের দু’বারের মোকাবেলায় ঢাকাকে দু’বারই হারিয়ে কুমিল্লা অবশ্য ফাইনালে এগিয়ে থাকার দাবি তুলছে। তবে একগাদা অলরাউন্ডার থাকা এবং পেছনের দুই ম্যাচে বড় জয়ে ফাইনালে ঢাকার আত্মবিশ্বাসের পারদও বেশ চড়িয়ে দিয়েছে।
ফাইনাল ম্যাচ জমিয়ে তোলার মতো যথেষ্ট অস্ত্র জমা আছে উভয় দলের ভান্ডারে। কুমিল্লার ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল ও এভিন লুইস। এই দুজনের একজন যদি ১০ ওভার পর্যন্ত জমে যান, তাহলে ঢাকার সামনে সমুহ বিপদ। কুমিল্লার মিডলঅর্ডারে শামসুর রহমানও যে ফর্মে আছেন, ঢাকার চিন্তা বাড়াতে সেটাও কম কিছু নয়। আগের ম্যাচে এনামুল হক বিজয়ও কিছুটা ব্যর্থতা ভুলিয়েছেন। অধিনায়ক ইমরুল কায়েস নিজের সেরাটা কি জমিয়ে রেখেছেন ফাইনালের জন্য? লোয়ার মিডলঅর্ডারে কুমিল্লার দুইজন পুরোই ‘বাঘা ব্যাটসম্যান’; শহীদ আফ্রিদি ও তিসারা পেরেইরা।
কুমিল্লার বোলিংয়ের সিংহভাগ শক্তি আবার স্পিনে। মেহেদি হাসান, সনজিত সাহা ও আফ্রিদির ১২ ওভার ফাইনালের অনেক হিসেব নিকেষ ঠিক করে দেবে। আর পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন টুর্নামেন্টে ১২ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে দলের সেরা পেসার। কোয়ালিফায়ারে সাইফুদ্দিনের পেসের সামনেই যে উড়ে যায় রংপুরের প্রতিরোধ।
ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগ মিলিয়ে কুমিল্লা সত্যিকার অর্থেই দারুণ ভারসাম্য নিয়েই ফাইনালে নামছে।
ঢাকার সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের চার অলরাউন্ডার; নারায়ন, সাকিব, রাসেল ও পোলার্ড। চারজনই আবার ফর্মের চুড়ান্ত অবস্থানে। আগের দুই নকআউট ম্যাচের দল নিয়েই সম্ভবত ফাইনালে নামছে ঢাকা। আগের ম্যাচে ব্যর্থ হলেও শ্রীলঙ্কান ওপেনার উপুল থারাঙ্গার ওপরই ফাইনালে আস্থা রাখছে সাকিব আল হাসানের দল। কুমিল্লার টপঅর্ডারে একগাদা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকায় ঢাকার বোলিংয়ের শুরুটাও হবে নিশ্চয়ই অফস্পিনার দিয়ে।
শুভাগত হোম আছেন না!
স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাটিংয়ে আলো ছড়াচ্ছেন রনি তালুকদার। নুরুল হাসান সোহান এবারের টুর্নামেন্টে সেরা উইকেটকিপার। ব্যাটে-বলে সাকিবের দারুণ সময় কেটেছে এবারের টুর্নামেন্টে। ১৪ ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৯৮ রান। আর বোলিংয়ে ২২ উইকেট। ফাইনালে আরেকটি উইকেট পেলেই নিজের গড়া এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের নতুন রেকর্ড গড়বেন সাকিব আল হাসান।
লোয়ার মিডলঅর্ডারে টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে যদি কাউকে বেছে নিতে বলা হয় তবে আন্দ্রে রাসেলের বাক্সেই সবচেয়ে বেশি ভোট জমা পড়বে। চার বা এক-দুই তেমন নয়, ছক্কা হাঁকাতেই বেশি পছন্দ উইন্ডিজ এই ব্যাটসম্যানের। রংপুরের বিপক্ষে শেষ নকআউটে অপরাজিত ৪০ রানের মধ্যে তার কোন বাউন্ডারি নেই, ছিলো ৫টি বিশাল ছক্কা!
শক্তি। সংঘর্ষ। তারকা। অভিজ্ঞতা। জেতার জেদ। গ্যালারির সমর্থন;এসব অনুষঙ্গকে এক নিক্তিতে নিয়ে বিপিএলের ফাইনাল কেমন হবে-এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে সম্ভাব্য উত্তর একটাই-বারুদ ম্যাচ!
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন অনলাইন প্রতিনিধি। খেলাধুলা বিষয়ে যেকোন তথ্য, প্রতিবেদন, প্রশিক্ষণ, টিপস, আপনার প্রতিষ্ঠানের খেলা সংক্রান্ত অলোচনা নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।