ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও করণীয়
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস এমন একটি সমস্যা, যেখানে রোগীর অস্বাভাবিকভাবে বেশি পরিমাণে অতি তরল প্রস্রাব হয়। ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চেয়ে এটির ভিন্নতা হলো— এটি রক্তের গ্লুকোজের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়; অর্থাৎ এটি বিপাকীয় রোগ নয়।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসে মূত্র ঘন করার হরমোন, যা কিডনিতে পানির পরিশোষণ করে, সেটির ঘাটতি থাকে। দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত পিপাসা পায়, যাতে একজন মানুষ ঘন ঘন প্রস্রাব করে এবং পানি পান করতে থাকে। দিনরাত এ প্রক্রিয়া চলে। এই রোগীরা বহুমূত্র সমস্যা নিয়েই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বেশ পরে আসেন।
তারা যখন চিকিৎসার আওতায় আসেন তখন দেখা যায় কেউ কেউ দিনে ১২ থেকে ২০ লিটার পানি পান করছেন এবং সে অনুসারে মূত্র ত্যাগ করছেন; যা তার জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। কিন্তু সমস্যাটি সহসা শুরু হয়নি। এ লক্ষণটি প্রতিষ্ঠিত হতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কয়েক বছর লেগে যায়। এটি সাধারণত জন্মগত ও পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষতির কারণে হয়। এ ছাড়া মাথায় আঘাত, সুপ্রাসেলার টিউমার, পিটুইটারি ম্যাক্রোএডেনোমা, মাথার অপারেশনজনিতসহ বিভিন্ন কারণে এ সমস্যা হয়।
তবে যেসব রোগীকে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের কারণে চিকিৎসা নিতে আসতে দেখা যায়, তারা প্রধানত মস্তিস্কের আঘাত বা মস্তিস্কের কোনো অপারেশনের ফলশ্রুতিতে এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ শনাক্তকরণ খুব সোজাসাপ্টা হতে পারে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস রোগের চিকিৎসা করার জন্য স্প্রে, বিশেষ করে যাতে ভ্যাসুপ্রেসিন ও ড্যাসমোপ্রেসিন হরমোনটি আছে তা ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এ জাতীয় ট্যাবলেটও পাওয়া যায়। রোগটি আজীবন থেকে যাবে, চিকিৎসাও আজীবন চলবে; কিন্তু চিকিৎসার ফলাফল বেশ ভালো, যদিও কিছুটা ব্যয়বহুল। তাই আক্রান্ত হলে শুরুতেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন, ভালো থাকুন।