গুলিয়াখালীর খণ্ড খণ্ড সমুদ্রে
স্থানীয়দের কাছে মুরাদপুর বিচ নামেই পরিচিত। কাগজে কলমে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। আর দশটা সৈকতের মতো ভেবে এই সৈকত দেখতে গেলে আপনাকে অবাক হয়েই ফিরতে হবে। তবে, হতাশ হয়ে নয়। চিরাচরিত সামুদ্রিক বেলাভূমি যেমন বালুকাময় হয়, তার বিপরীতে গুলিয়াখালী বুকে ধারণ করছে সবুজ সৌন্দর্য। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় এই অনিন্দ্য সুন্দর সৈকতে সমুদ্রকে পাওয়া যায় নীরবে, নিরিবিলিতে।
এসো, বসো, আমার উঠোনে/ বুক ভরে নাও শ্বাস… সবুজ সতেজ ঘাসগুলো যেন ডাকে গানের মতো করে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিরাট কোন মাঠ যেন। মাঠের কাছে গেলে চোখ সরানো দায়। মাঠের মধ্যে খণ্ড খণ্ড হয়ে ঢুকে আছে সমুদ্র। সারা মাঠ জুড়ে ছোট ছোট নালা। সেখানে জমে থাকা পানিতে আকাশের প্রতিবিম্ব দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। দুই পাশে ঘন গাছের সারি। সামনে সমুদ্র। আরেকপাশে ম্যানগ্রোভ বন। যত্ন করে সাজানো বাগান যেন। দেখলে মনে হবে এ যেন পৃথিবীর কোন দৃশ্য নয়। হলিউড মুভির ভিএফএক্স প্রযুক্তির কারসাজি। এত সতেজ সবুজ দেখলে শহুরে তৃষ্ণাতুর চোখ প্রকৃতির প্রেমে পড়তে বাধ্য।
জোয়ারের সময় যৌবন পায় এই সৈকত। অপার্থিব এক রূপ মুগ্ধ করে পর্যটকদের চোখকে। সৌন্দর্য পিপাসু মানুষকে মুগ্ধ করতে সব আয়োজন সাজিয়ে রেখেছে গুকিয়াখালী সৈকত। যেদিকে তাকাবেন, শুধু মুগ্ধতা। এই মুগ্ধতা মনে রয়ে যাবে বহু বহু দিন।
এখানকার বাতাসেও মিশে আছে প্রকৃতির আদুরে ছোঁয়া। কেওড়া গাছের তলায় ঘন সবুজ ঘাসে পা ছড়িয়ে বসে সমুদ্রের বাতাস গায়ে মাখতে মাখতে নিমেষেই চোখ বুজে আসে আরামে। গরমের দিনে তো এই আয়োজন মনে হবে স্বররগীয়। শুধু সমুদ্র, বাতাস আর পাখির ডাক। আর কোন কোলাহল স্পর্শও করবে না।
সবুজ বেলাভূমি দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।
দূরত্ব সীতাকূণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার। নিরিরবিলি গুলিয়াখালীর বেলাভূমিতে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ে প্রায় নিঃশব্দেই। সমুদ্রের তর্জন গর্জন নেই বললেই চলে। সমুদ্রের এমন শান্ত-কোমল রূপ দেখে ইচ্ছে করবে ভেসে বেড়াতে জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে। এখানে সে ব্যবস্থাও আছে। চাইলেই জেলে নৌকায় করে ঘুরে আসা যায় সমুদ্র থেকে।
ঘুরতে ঘুরতে সৈকতের কেওড়া বনের দকে তাকালে মনে হয় প্রকৃতি খুব যত্ন নিয়েই তৈরি করেছে গাছ, ঘাস আর সৈকত। গুলিয়াখলিতে এখনও মানুষের আনাগোনা কম। তাই সৌন্দর্যও রয়েছে অক্ষত। তবে দিনে দিনে বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। সঙ্গে করে নিয়ে আসা চিপসের প্যাকেট কিংবা কোমল পানিয়ের বোতলের মতো অপচনশীল বর্জ ফেলে যাচ্ছেন যত্রতত্র। বাড়ছে আবর্জনার পরিমাণ।
এইসব আবর্জনা বাড়লে অচিরেই গুলিয়াখালী সৈকত হারাবে তার রূপ সৌন্দর্য। যারা ঘুরতে যাবার কথা ভাবছেন,এই বিষয়টাও খেয়াল রাখবেন নিশ্চয়ই। আমাদের প্রকৃতিকে তো আমাদেরই বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
যেভাবে যাবেন
দেশের যে প্রান্ত থেকেই গুলিয়াখালী যেতে চান প্রথমেই আপনাকে সীতাকুণ্ড শহরে আসতে হবে । সেখান থেকে সিএনজি পাবেন । ভাড়া নেবে ৩০ টাকা প্রতিজন। সিএনজি থেকে নামতে হবে বেড়িবাঁধ । বেড়িবাঁধ থেকে মিনিট ১৫ হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন গুলিয়াখালী সৈকতে।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন অনলাইন প্রতিনিধি। লাইফস্টাইল বিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।