আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাষ্ট্রপরিচালনা করতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রিয়তা সাধারণত হ্রাস পায়, কিন্তু আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এর কারণ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় প্রধান কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টামণ্ডলীর যৌথ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবারের নির্বাচনের দিকে যদি তাকান, দেখবেন সব শ্রেণীপেশার মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। যেটা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। এমনকি ব্যবসায়ী সম্প্র্রদায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, ছাত্র- সবচেয়ে বড় কথা যারা প্রথমবারের ভোটার, নবীন ভোটার সবাই আওয়ামী লীগ সরকারকে আবারও চেয়েছে।’
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের ভরাডুবির কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘যেহেতু মিলিটারি ডিকটেটর ক্ষমতা দখল করার মধ্যদিয়ে এসব দল গঠন হয়েছে, খুব স্বাভাবিকভাবে এরা পরজীবীর মতো। নির্বাচনকে তারা মনে করেছে ব্যবসা। টিকিট বেচে তারা কিছু পয়সা কামাই করে নিয়েছে, কিন্তু নির্বাচনের প্রতি তাদের খুব একটা নজর ছিল না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে যখন সার্ভে করা হয়েছিল, সেই সার্ভেতে স্পষ্ট হয় যে, আওয়ামী লীগকে জনগণ চায়। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এবং আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে।’
আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘দলকে তৃণমূল পর্যন্ত নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে। এ লক্ষ্যে আট বিভাগের জন্য আটটি কমিটি করা হয়েছে, কমিটিগুলোর দায়িত্ব থাকবে তৃণমূলে নতুন করে দলকে ঢেলে সাজানোর।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আরেকটি কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা প্রেসিডিয়াম মিটিং করেছি। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করেছি। আমরা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কার্যিকরী সংসদের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে ৮ বিভাগে ৮টি কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটির দায়িত্ব থাকবে দলকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নতুন করে ঢেলে সাজানো। কোথায় কমিটি আছে না আছে সেগুলো দেখা। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে আরও মজবুত করে গড়ে তোলা।’
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এগুলোই ছিল তাদের কাজ। আজকে দেশের মানুষ অন্তত শান্তি পাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এবারের নববর্ষ সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপন করেছে। সব শ্রেণীপেশার মানুষ উৎসব পালন করেছে। আমরা কিন্তু নববর্ষ ভাতাও দিচ্ছি। বাংলাদেশকে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’
জাতির পিতার অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশটা যখন জাতির পিতার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে তখনই ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনা ঘটে। নির্মমভাবে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।’
১৫ আগস্ট পরবর্তী দুই দফায় ২৯ বছরের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর জাতির জীবনে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। এ সময় মানুষের কোনো অগ্রগতি হয়নি। কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০৮ সালে নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করি এবং এখন পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। আজ বাংলাদেশ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার পথে। আমরা প্রায় ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে দারিদ্র্যের হার নামিয়ে এনেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। গ্রামের মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হচ্ছে। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে। এটাই জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল। জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। এ জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। সরকারিভাবেও ব্যবস্থা নিয়েছি, পার্টির পক্ষেও পদক্ষেপ নিয়েছি এবং একটি কমিটিও করেছি। সেই কমিটির মাধ্যমে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। এই সময়টাকে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকে এখানে আলাপ আলোচনা করব।
যৌথসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচটি ইমামসহ দলটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
১০ টাকার টিকিট কেটে চিকিৎসা নিলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন সকালে সাধারণ রোগীদের মতো ১০ টাকার টিকিট কেটে আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী এখানে এভাবে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন। চিকিৎসা নেয়ার সময় তিনি হাসপাতালের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসক ও নার্সদের ধন্যবাদ জানান।
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন সক্রিয় অনলাইন প্রতিনিধি। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা, অপরাধ, সংবাদ নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।