ঘুরে আসুন কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ, খুলনা এর আওতাধীন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র এক অনাবিল সুন্দরবনীয় সৌন্দর্যসম্ভোগ।এখানে বন্যপ্রাণীদের কাছে যাওয়া ও বন্যপ্রাণীদের পানীয় জলের অভাব মেটাতে রয়েছে সুপেয় জলের একটি পুকুর।
দুষ্ট বাঁদর যেমন মুখ ভেংচি কেটে, এখানে ভয় দেখায় আবার মায়া হরিণ তেমনি এখানে মায়াজড়ানো মায়াবী চোখ তুলে আপনার কাছে চলে আসে সামান্য খাবারের জন্য। বিশাল লম্বা বনের মধ্যের ট্রেইল দিয়ে হাঁটতে গিয়ে বুক ধড়ফড় ভয় আপনাকে জড়িয়ে থাকবে আবার ৫ তলা ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখতে পাবেন সবুজের অরণ্য, সে অরণ্যজুড়ে রয়েছে সুন্দরি, গেওয়া, গরাণ, কেওড়া, পশুর, বাইন, কাঁকড়া ও গোলপাতাসহ মোট ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ।
লোকালয় থেকে বেশ দূরে বনের ভেতরে এই ট্রেইল এবং টহল ফাঁড়ি তাই এখানে শুনশান নিস্তব্ধতায় ছেয়ে থাকে চারপাশ। তবে সব নীরবতা ভেঙে বানরের ডাক আর ভেঙচি কাটা যেন ভয়ের সঞ্চার করে। ট্রেইলের আশপাশে এত ঘন বন যে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে কয়েক গজে আর সঙ্গে তো বাঘের ভয় আছেই, সে এক অন্যপ্রকার অনুভূতি, ভয়জড়ানো অ্যাডভেঞ্চার।
আমরা সব থেকে যে চরম দুর্দশায় পড়েছিলাম সেটা হলো লাঠি চাড়াই ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পড়া, আপনি ভাবছেন ওয়াচ টাওয়ারে আবার লাঠির কি দরকার! হ্যাঁ দরকার বৈকি কারণ বানরের যে উপদ্রব সেটা তো আপনি দেখেননি।
লিখতে গিয়েও মনে পড়ছে সেই শোচনীয় অবস্থার কথা, হাতিয়ার ছাড়া মানুষ বনে কি করুণ দশায় পড়তে পারে তার নমুনারূপ দেখে। আমার মনে হয়েছিল এই বানর তো ছোট বাচ্চাকাচ্চা আক্রমণ করে বনে নিয়ে চলে যাবে, এই জন্যই হয়তোবা বলা হয় বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। এখানে বানর ফোন ছিনতাই করে বনে উধাও হয়ে গেছে এমন খবর ও কিন্তু বিরল নয়, তাই বানর থেকে সাবধান এবং ওয়াচ টাওয়ারে ওঠার আগে অবশ্যই লাঠি নিয়ে উঠবেন।
আমরা ছিলাম মোট চারজন দুজন বোটচালক, যদিওবা জায়গাটা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের সুন্দরবনের ভেতরে অবস্তিত কিন্তু খুলনার কয়রা থেকেও এখানে যাওয়া যায় আর আমাদের বাসা কয়রা হওয়াতে আমরা সেই বিকল্প রুট ব্যবহার করে এখানে যাই খুলনা শহর থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ঘড়িলাম বাজার যা কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে অবস্থিত।
এখানে রয়েছে কোবাদাক ফরেস্ট স্টেশন যে পর্যন্ত আসা যাবে প্রথমে বাস তারপর মোটরগাড়িযোগে, আর এখান থেকেই যাত্রা শুরু করতে হয় ট্রলারযোগে এক ঘণ্টার বেশি ট্রলার যাত্রার পর পাওয়া যাবে কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র।
এই যাত্রাপথে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম সুন্দরবনের বুনো হরিণ যার কোনো বাধাবিপত্তি নেই, আছে শুধু বাঘের ভয়, চরে দেখলাম অসংখ্য বানর রোদ পোহাচ্ছে, একটা মদনটাক দেখলাম আমাদের ট্রলারের সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে চলেছে।
সব থেকে মজার হলো মায়াবী, শিংওয়ালী হরিণ সব আপনার পিছু পিছু ঘুরতে থাকবে যদি কিনা আপনার হাতে মুড়ি চিপস এ ধরনের খাবার থাকে, হরিণগুলো খুব বেশি সুন্দর আর মায়ামৃগ। এরপর সেই ওয়াচ টাওয়ারে বানর যুদ্ধ শেষে আমরা বনের মধ্যে ট্রেইলে ঢুকি, পশুর, সুন্দরী আর গেওয়া গাছের সঙ্গে ছবি তোলার দারুণ স্পট তৈরি এবং ট্রেইল আধুনিকরণের কাজ আরও এগিয়ে চলেছে, তবে ট্রেইলে ও সঙ্গে লাঠি রাখবেন বানরের আক্রমণ ঠেকাতে।
আমরা আবার ফিরে আসি সেই পোষা হরিণদের কাছে অবশিষ্ট খাবার খাইয়ে ফিরে আসি ট্রলারে তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে নদীতে, যে নদীর এপার ওপার সব পারে সুন্দরবন, দেখেছেন কভু এমন জায়গায় সূর্যাস্ত, হয়েছে কিবা দেখা সুন্দরবনের সুন্দর গাছের মাঝে লাল টকটকে সূর্যের ডুব দেয়া? হ্যা হলো তো এবার ফেরা যায় পেছনে পড়ে থাক হাজারো রহস্যময় সুন্দরবনের সৌন্দর্য…
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন আওয়ার বাংলা অনলাইনের একজন অনলাইন প্রতিনিধি। লাইফস্টাইল বিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুনঃ [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।